কবিতা- ভাগাভাগি

ভাগাভাগি
-অমরেশ

 

 

বেকারত্ব বাড়ছে, চাকরি নেই
চাকরি ! যোগ্যপ্রার্থী আছে নাকি ?
আর যা আছে বাকি, ফাঁকা আছে সেকি
বাবু, মাস্টার ডিগ্রি, পিএইচডি সব তো লাইনে পড়ে
কাজ নেই, টাকা নেই খিদেয় যে যাচ্ছে মরে
সবই তো বুঝলাম, বাবু হেসে বলে
আমার ছেলের আসনটা যাবে যে চলে ।।

দাদা! রমেন দুই দেবে —
দুই ! দুই-এ এখন কিছু হয় নাকি?
ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ এসব আমার কাজ নয়
অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট আছে তো হোক না ডেলিভারি বয় ;
রমেন ব্ল্যাকলিস্ট, নেক্সট —
সুদীপ সাত-এ পাকা করতে বলেছে —
সাত , আচ্ছা , ঠিক আছে, সামনে প্রাইমারিতে নাম রাখ
আরে ,আরে তাড়াতাড়ি কর, কার কার নাম আছে ডাক ।।

দাদা! এ কুড়ি দেবে, অফিসার হবে, করতেই হবে
দাদু অফিসার ছিল নাতিও তাই হবে —
হবে ,হবে, সব হবে । কুড়িতে নয় তিরিশ হবে
সাদা খাতা জমা দিলে এমনি হবে —
অফিসার কি এমনি হবে ?
পকেটটা তো একটু খালি হবে ।।

দাদা আমারও এবার মোটা কিছু চাই
আমি এত খুঁটে খুঁটে খাই
তুমি কি জানো না —
উপরে কত আছে দামোদর শেঠ
অল্পে কি তাদের ভরে পেট
শোনো তবে বলি,
যদি হও সজন তেঁতুল পাতায় নজন
অল্পে হও খুশি, চেও না এর থেকে বেশি
যা আছে পড়ে, ভাগাভাগি করে যাও চলে ।।

শিল্পী আছে –শিল্প নেই, চাষী আছে – চাষ নেই
শ্রমিক শ্রেণী, দীন মজুরের ঘরে অন্ন নেই
পেটের দায়ে চাষীর ঘরে ক্রন্দন
ধর্মঘটে রাস্তা মাঝে আন্দোলন
খিদের জ্বালায় কাস্তে হাতে
অন্নহীনে মরছে আমার দেশবাসী
ভোটের হাওয়ায় গা ভাসিয়ে বলছে নেতা
আমিও ছিলাম মাঠের চাষী ;
সব মরছে মরুক অন্ন জমুক , মজুত ঘরেতে
ছুঁচোর দলে, ইঁদুরগুলো করছে ভাগ পেট ভরাতে —
বাইরে শুধু, আরশোলা আর ফড়িং গুলো
উড়ছে দলে দলে
মধুর খোঁজে মৌলি হয়ে বসছে তারা
ফুলে ভরা ডালে —
পূর্ণ মৌচাক শুন্য হয়ে পড়ে
মৌমাছিরা যাচ্ছে সব অন্য কোথাও উড়ে
আপন মনে বলছে শুধু মুচকি হেসে হেসে,
“যেখানে মধু নেই সেখানে মাছি নেই —”
এ ভাগাভাগি কি একদিন বন্ধ হবে ?
কিন্তু কবে ? কিন্তু কবে ?
দেশভাগ , সমাজ ভাগ, জাতি ভাগ, ধর্ম ভাগ
সব যে ভাগের খাতায় ।।

Loading

Leave A Comment